(ক) পারিবারিক পর্যায়ে খরগোশ পালন :
(1) পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যথা : আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড, বৃটেন, নেদারল্যান্ড, চীন, জাপান সহ অনেক দেশে বানিজ্যিক ভাবে খরগোশ প্রতিপালন করা হয়। বাংলাদেশে ইহার পালন এবং মাংস এখনও জনপ্রিয়তা অর্জন করেনি। তবে বি,আর,ডি,বি এবং বাংলাশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য কিছু বেসরকারী সংস্থা খরগোশ পালনে খামারীদের উৎসাহিত করতে সক্ষম হয়েছে।
(2) বানিজ্যিক ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক খরগোশ পালন অত্যন্ত লাভজনক।
(3) বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির যে খরগোশ দেখা যায়, তন্মেধ্যে সাদা, কালো, ডোরা এবং খয়েরী রংয়ের খরগোশ বেশী। বাংলাদেশে প্রাপ্ত জাত সমূহের মধ্যে ডার্ক গ্রে (নেটিভ), ফক্র্, ডাচ, নিউজিল্যান্ড সাদা, নিউজিল্যান্ড লাল, নিউজিল্যান্ড কালো বেলজিয়াম সাদা এবং ছিনছিলা প্রভৃতি উল্লেখ যোগ্য।
( খ) বাংলাদেশে প্রাপ্ত বিভিন্ন জাতের খরগোশের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা :
জাত | উৎপত্তি | প্রাপ্তি স্থান | রঙ | দৈহিক ওজন (বয়স্ক) | অন্যান্য বৈশিষ্ট্যু |
১) ডার্ক গ্রে (নেটিভ) | বাংলাদেশ | ঢাকা যশোর | গাঢ় ধূসর | ২-৩ কেজি | চালাক চতুর এবং ভাল তৃনভোজীু |
২) ফক্স | আমেরিকা | ঐ | কালো এবং অম্রবর্ন | ২.৫-৩.১৭ কেজি | ছোট আকৃতির এবং মাংসল জাত |
৩) ডাচ | নেদারল্যান্ড | ঢাকা | সাদা দাগযুক্ত ধূসর রঙের | ১.৮-২.২৫ কেজি | মাংস উন্নতমানের এবং ল্যাব প্রাণী |
৪) নিউজিল্যান্ড লাল | নিউজিল্যান্ড | ঢাকা যশোর | লালচে সাদা | ৩.৬০-৪.৫০ কেজি | মাংস খুবইা উন্নতমানের তৃনভোজী এবং তুলনামূলকভাবে বেশী শান্ত |
৫) নিউজিল্যান্ড সাদা | নিউজিল্যান্ড | ঢাকা যশোর খুলনা বাগেরহাট | সাদা | ৪.৫০-৫.৪৪ কেজি | মাংস খুবই সুস্বাদু দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ভাল তৃনভোজী |
৬) নিউজিল্যান্ড কালো | নিউজিল্যান্ড | ঢাকা যশোর খুলনা | কালো | ৪-৫.৪৪ কেজি | দ্রুত বর্ধনশীল, তৃনভোজী এবং এর মাংস খুবই সুস্বাদু |
৭) বেলজিয়াম সাদা | বেলজিয়াম | ঢাকা | সাদা | ৩.৫২-৪.৭ কেজি | দ্রুত বর্ধনশীল, তৃনভোজী এবং এর মাংস খুবই সুস্বাদু |
৮) ছিনছিলা | ফ্রান্স | ঢাকা যশোরু |
| ২.৫০-২.৯৫ কেজি | অত্যন্ত ভাল মানের মাংস উৎপাদনকারী এবং তৃনভোজী |
(M) খরগোশ পালনের সুবিধা সমূহ :
(1) ইহা দ্রুত বর্ধনশীল প্রাণী।
(2) বাচ্চা দেয়ার হার অত্যাধিক, এক সাথে ২-৮ টি প্রসব করে।
(3) প্রজনন ক্ষমতা অধিক এবং এক মাস পর পর বাচ্চা প্রদান করে।
(4) খাদ্য দক্ষতা অপেক্ষাকৃত ভাল।
(5) মাংস উৎপাদনে পোল্ট্রির পরেই খরগোশের অবস্থান।
(6) অল্প জায়াগায় স্বল্প খাদ্যে পারিবারিক পর্যায়ে পালন করা যায়।
(7) অল্প খরচে অধিক উৎপাদন সম্ভব।
(8) খরগোশের মাংস অধিক পুষ্টিমান সম্পন্ন ও উন্নতমানের।
(9) সব ধর্মের লোকই ইহার মাংস খেতে পারে তাতে কোন সামাজিক বাধা নেই।
(১০) রান্না ঘরের উচ্ছিষ্টাংশ, বাড়ীর পাশের ঘাস এবং লতা পাতা খেয়ে ইহার উৎপাদন সম্ভব।
(১১) পারিবারিক শ্রমের সফল ব্যবহার করা সম্ভব।
(ঘ) খরগোশের শারিরীক ও বায়োলজিক্যাল বৈশিষ্টাবলী :
গুনাবলী | পর্যবেক্ষন | মন্তব্য |
পায়ুর তাপমাত্রা | গড়ে ৩৯.৫০ সে রেঞ্জ ৩৮-৪০ সেঃ | জাতের পাথক্য বিদ্যমান এবং ছোট প্রাণীতে বেশী তাপমাত্রা থাকে। |
নাড়ী স্পন্দন | (১৫০-৩০০) বিট/মিনিট | খুব ছোট খরগোশের হৃদয স্পন্দন বেশী হয় |
শ্বাস প্রস্বাসের হার | ৩০-১০০ মি: | প্রাপ্ত বয়সে গড়ে ৫-৫০ |
দুগ্ধ দান কাল | গড়ে ৪২ দিন | - |
বাচ্চা প্রদানের হার/মাদী খরগোশ/বৎসর | ২-১০ | সাধারণত : পদর্শনী জাত গুলিতে কম হয় তবে আভ্যন্তরীণ ফার্মে ব্যবহৃত জাত গুলিতে ইহার সংখ্যা বেশী হয়। |
বাচ্চার সংখ্যা | ২-১৪ টি | ইহা নির্ভর করে জাত, স্টেইন পার্থক্যের উপর। মাঝারী আকারের প্রদর্শণী স্টকে কম গড়ে ৫-৬টি কিন্তু বাণিজ্যিক জাতে ৮-৯টি |
জীবন কাল | ৬-১১ বৎসর | - |
পুর্নতা প্রাপ্তির বয়স | ১৬-২৬ সপ্তাহ | ছোট জাতের পূর্নতা প্রাপ্তি আগে হয় |
গর্ভধারন কাল | ৩১-৩২ দিন | তবে ইহা ২৯-৩৪ দিন হতে পারে |
প্রাপ্ত বয়স্ক ওজন | ১-৭.৫ কেজি | তবে খুব কম ক্ষেত্রে ১২ কেজি পর্যন্ত ওজনহয়। |
সেক্স রেশিও | ১০০ পুরুষঃ ১০২ স্থী খরগোশ | - |
(ঙ) খরগোশ প্রতি পালনের প্রয়োজনীয় তথ্যাবলীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
1) বানিজ্যিকভাবে খরগোশ প্রতিপালনের জন্য বহুতল বিশিষ্ট খাঁচা এবং মেঝেতে খরগোশ পালন করা যায়। স্বাভাবিকভাবে জাত অনুযায়ী মেঝের আকার বিভিন্ন ধরনের হয়।
2) সাধারনতঃ প্রতি ৮টি বয়স্ক খরগোশের জন্য ৫’X ২ বর্গফুট একটি খাঁচার প্রয়োজন হয় এবং প্রজননের সময় আলাদা প্রজনন ঘর ব্যবহার করা (১ বর্গফুট /১/২ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য) হয়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের খরগোশ ছেড়ে পালন করা যায়, তবে বাচ্চা দেয়ার সময় এরা নিজেরাই গর্ত খুড়ে নিজের গায়ের লোম ছিড়ে বাসা তৈরী করে।
3) যদি খাচায় পালন করা হয়, তবে বাচ্চা দেয়ার সময় মেটার্নিটি বক্স বা নেট ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক খরগোশের খাঁচার পরিমান ও মেটার্নিটি বক্সের পরিমান দেয়া হলো :
4) খরগোশের ঘরের / খাঁচার পরিমাপ : প্রতিটি খরগোশের জন্য খাঁচার পরিমাপ
দৈর্ঘ্য - ৭৫ সে:মি:
প্রস্থ্য - ৪৫ সে:মি:
এবং উচ্চতাু ৩৫ সি:মি:
5) মেটার্নিটি বক্সের পরিমান
দৈঘ্য - ৪০ সে:মি:
প্রস্থ্য - ৩০ সে:মি:
উচ্চতা - ২৫ সে:মি:
দরজা -১৫ সে:মি:
(P) খাদ্য :(১) বয়স ও জাত ভেদে খরগোশের খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হয়। একটি বয়স্ক খরগোশের খাদ্য রসদে
পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা নিম্নে দেয়া হলো :
ক্রুড প্রোটিন (সিপি) = ১৭% (ভাগ)
আঁশ (ফাইবার ) = ১৪% (ভাগ)
মিনারেল = ৭%
বিপাকীয় শক্তি (এমই )=১১ মেগাজুল/কেজি
(২) খাদ্য গ্রহন
১৩০-১৪৫ গ্রাম/দিন (বয়স্ক খরগোশ)
২৫০-৩০০ গ্রাম/দিন (দুধালা খরগোশ)
৯০ গ্রাম/দিন (বাড়ন্ত খরগোশ)
(৩) খাদ্য উপাদান সমূহ
সবুজ শাকসব্জি
ঋতু ভিত্তিক সব্জি, পালং শাক, গাজর, মুলা, শশা, শাকের উচ্ছিষ্টাংশ, সবুজ ঘাস ইত্যাদি।
(4) দানাদার খাদ্য :
চাল, গম, ভুট্রা, তৈলবীজ ইত্যাদি। তবে বানিজ্যিক ভাবে খরগোশ পালনের জন্য মুরগীর মত তৈরীকৃত মিশ্রিত খাদ্য খরগোশের রেশন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
(Q) প্রজনন :
(1) খরগোশ সাধারনত: ৫-৬ মাস বয়সে প্রথম প্রজননক্ষম হয়, তবে ঋতু এবং পর্যাপ্ত ওজন প্রাপ্তির উপর ইহা অনেকাংশে নির্ভরশীল।
(2) গর্ভবর্তী খরগোশ ২৮-৩৪ দিনের মধ্যে বাচ্চা দেয় এবং বাচ্চার ওজন খরগোশের শারিরিক ওজনের উপর নির্ভরশীল।
(3) ই্হা সাধারণত: দৈহিক ওজনের ২% হয় অর্থ্যাৎ ১.২৫ কেজি (সোয়া কেজি) ওজনের একটি খরগোশের বাচ্চার ওজন হয় ৩০ গ্রাম।
(4) খরগোশের দুগ্ধদান কাল সময় ৬-৮ সপ্তাহ এবং উইনিং ওজন হলো ৮০০-১২০০ গ্রাম। খরগোশ প্রতিবারে ২-৮টি বাচ্চা প্রদান করে এবং একবার বাচ্চা দেয়ার ৩ মাস পরেই আবার বাচ্চা দিতে পারে। প্রজননের সময় একটি পুরুষ খরগোশের সাথে ৩-৪টি স্থী খরগোশ রাখা যেতে পারে, তবে গর্ভবর্তী খরগোশকে পৃথক করে রাখা প্রয়োজন।
(R)খরগোশের বাচ্চার যত্ন :
(1) খরগোশ ছোট প্রাণী্যদিও ইহা একসংগে ৬-৮টি বাচ্চা দেয়। তাই অনেক সময় প্রথম দশ দিন এই বাচ্চাগুলোর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয, যেমন : মা খরগোশ হতে দুধ খেতে সাহায্য করা, প্রয়োজনে ফিডারে করে দুধ খাওয়ানো, ভাতের মাড় বা দুধে বিস্কুট ভিজিযে খাওয়ানো যেতে পারে।
(2) তাছাড়া বাচ্চার ঘরের প্রয়োজনীয় তাপের ব্যবস্থা করা, প্রিডেটর,লাল পিপড়া ইত্যাদির হাত থেকে বাচ্চা রক্ষা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক।
(ঝ) খরগোশের রোগ বালাই :
খরগোশ অতিশয় সুন্দর এবং নরম প্রকৃতির প্রাণি। ইহা অত্যাধিক পোষ মানে। খবগোশের রোগ তুলনামূলক ভাবে কম। খরগোশ পরিচ্ছন্ন জায়গায় থাকতে বেশী পছন্দ করে। ইহার ঘর সর্বদাই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। ঘরে প্রয়োজনীয় আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঘরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা, ধুলোবালি, পোকামাকড়, ইঁদুর, পিঁপড়া ইত্যাদি রোধ করতে হবে। ঘরে ২৯০ সে: এর বেশী তাপমাত্রা থাকলে পুরুষ খরগোশের সাধারনত: অনুর্বরতা দেখা যায়।তাছাড়া কক্সিডিওসিস, গলাফুলা, পাস্ত্তরিলোসিস প্রভৃতি কয়েকটি রোগ খরগোশের সাধারণত: দেখা দেয়। নিম্নে অসুস্থ্য খরগোশের কয়েকটি লক্ষন দেয়া হলো :
1. চোক কান খাড়া থাকে না।
2. লোম শুস্ক ও রুক্ষ দেখায়।
3. খাদ্য, পানি, খেতে অনীহা প্রকাশ করে।
4. দৌড়া দৌড়ি কম করে।
5. শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস