গবাদি পশুর খাদ্যে কাঁচা ঘাস সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা
গবাদি পশুকে পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস সরবরাহ করলে নিম্ন লিখিত লাভ হয়।
· অধিক দুধ পাওয়া যায়।
· খাদ্য খরচ কম হয়।
· সুস্থ্য-সবল বাছুর জন্ম দেয়।
· কৃত্রিম প্রজননের সফলতা পাওয়া যায়।
· সঠিক বয়সে যৌন পরিপক্কতা আসে।
· জন্মের সময় বাচ্চার মৃত্যু হার খুবই কম হয়।
· দানাদার খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কম হয় ফলে উৎপাদন ব্যয় কমে যায়।
· কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে যে বাছুর জন্ম নেয় তার দৈহিক ওজন কাংখিত মাত্রায় পাওয়া যায়।
· লাভ বেশী হয় ফলে কৃষক গাভী পালনে উৎসাহিত হয়।
· উন্নত জাতের একটি গাভী পালন করে ছোট একটি সংসার চালনো যায় ফলে দারিদ্র বিমোচন করা সম্ভব হয়।
· রোগ-ব্যাধি কম হয় ফলে চিকিৎসা খরচ খুবই কম হয়।
· ঔষধ খরচ কম হয়।
· গাভীর মৃত্যু হার খুবই কম হওয়াতে আর্থিক ক্ষতি হয় না।
· দুধ উৎপাদন বেশী হলে গরিব কৃষক দুধ বিক্রয়ের পাশাপাশি নিজেরাও দুধ খেয়ে থাকে ফলে তাদেরও স্বাস্থ্য সুস্থ্য থাকে।
· এক একর জমিতে ধান চাষ করে যে লাভ পাওয়া যায় ঘাস চাষ করলে তার চেয়ে কয়েক গুন বেশী লাভ পাওয়া যায়।
১৬.৪.২ কাঁচা ঘাস না খাওয়ানোর অপকারিতা।
· দুধ উৎপাদন কম হয়।
· অপুষ্টিতে ভোগে ফলে রোগ-ব্যাধি বেশী হয়।
· প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়।
· ঘন ঘন কৃত্রিম প্রজনন করতে হয়।
· গর্ভপাতের পরিমাণ বেড়ে যায়।
· দূর্বল ও কম ওজনের বাছুরের জন্ম হয়। ফলে বাছুরের মৃত্যু হার বেড়ে যায়।
· পরবর্তীতে অপুষ্টিতে ভোগার কারনে বাছুরের মৃত্যু হার বেড়ে যায়।
· যৌন পরিপক্কতা দেরিতে আসে।
· মাংস উৎপাদন কম হয় এবং মাংসের গুনগত মান নিম্নমানের হয়।
· দূর্বলতার কারণে রোগ-ব্যাধি বেশী হওয়াতে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যায় এবং ঔষধের খরচও বেড়ে যায়। রোগ হওয়াতে উৎপাদন কমে যায় ফলে আর্থিক ক্ষতি হয়।
· কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জন্মনো বাছুরের পরবর্তীতে আশাতিত ওজন পাওয়া যায় না। ফলে আশানুরূপ উৎপাদনও পাওয়া যায় না।
· দানাদার খাদ্য বেশী দরকার হয় ফলে গাভী পালনের খরচ বেড়ে যায়।
১৬.৫ বিভিন্ন ধরনের ঘাস চাষ পদ্ধতি (নেপিয়ার, পারা, গিনি, জার্মান, ভুট্টা ইত্যাদি)
নেপিয়ারঘাস চাষ পদ্ধতি
স্থায়ী ঘাসের মধ্যে নেপিয়ার উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় নেপিয়ার খুব ভাল হয়। কচি অবস্থায় পুষ্টিমান বেশী থাকে। গবাদি পশুর জন্য নেপিয়ার অত্যন্ত উপাদেয় ও পুষ্টিকর খাদ্য।
চাষ পদ্ধতিঃপ্রায় সব রকম মাটিতেই হয় তবে উঁচু ও বেলে-দোঁআশ মাটি সবচেয়ে ভাল। ডোবা, জলাভূমি, পানি জমে থাকে এরকম স্থানে ভাল হয় না। জমিতে ৪/৫টি চাষ দিয়ে আগাছা বেছে নিয়ে ঘাসের কান্ড অথবা শিকড়সহ মুথা মাটিতে পুঁততে হয়।
চিত্র ১৬.২ঃ নেপিয়ার ঘাস
রোপণ প্রণালী ও সময়ঃসারাবর্ষা মৌসুমেই রোপণ করা যায়। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে প্রথম বৃষ্টির সময় রোপণ করলে প্রথম বছরেই ৩-৪ বার কাটা যায়। কান্ড লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন রোপণকৃত কান্ডে দুইটি গিড়া থাকে। এ ঘাস সারিবদ্ধ ভাবে লাগাতে হয়, এক সারি হতে অন্য সারির দূরত্ব ১.৫ - ২ ফুট ও সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব ১-১.৫ ফুট। চারার গোড়া মাটি দিয়ে শক্ত করে চাপা দিতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে চারা লাগানোর পর পরই পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
সার প্রয়োগ ও পানি সেচঃবর্ষার সময় সেচের প্রয়োজন নেই। চারা লাগানোর আগে জমি তৈরীর একত্রে ২০০০-২৫০০ কেজি গোবর সার ছিটিয়ে ভাল করে মাটিতে মিশিয়ে দিলে ফলন ভাল হয়। এছাড়া একর প্রতি ৩৫ কেজি ইউরিয়া, ২৬ কেজি টি এস পি ও ২০ কেজি এম পি দেওয়া ভাল। প্রতিবার ঘাস কাটার পর একর প্রতি ২৬ কেজি ইউরিয়া দিলে ফলন ভাল পাওয়া যায়। সার ছিটানোর পূর্বে দুই সারির মাঝখানে লাংগল বা কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে।
ফসল কাটা ও ফলনঃপ্রথম লাগানোর ৪০-৫০ দিন পরেই ঘাস কেটে খাওয়ানো যেতে পারে। গোড়ায় ২-৩র্র্ রেখে ঘাস কাটতে হবে। বছরে ৮-১০ বার কাটা যায়। একর প্রতি ৬০,০০০-৬৫,০০০ কেজি কাঁচা ঘাস হতে পারে। পৌঁষ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত শীতের সময় শুষ্ক আবহাওয়ার দরূন ঘাসের ফলন কমে যায়। তবে সেচের ব্যবস্থা থাকলে ভাল ফলন পাওয়া যেতে পারে।
খাওয়ানোর নিয়ম ও সংরক্ষণঃজমি থেকে কেটে এনে টুকরা করে খাওয়ানোই উত্তম। তাছাড়া খড়ের সাথে মিশিয়েও খাওয়ানো যায়। শুকিয়ে রাখা সুবিধাজনক নয় তবে সাইলেজ করে সংরক্ষণ করা যায়।
পারা ঘাস চাষ পদ্ধতি
পারা এক প্রকার স্থায়ী ঘাস। একবার রোপণ করলে কয়েক বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
চাষ পদ্ধতিঃপারা ঘাস উঁচু, নীচু, ঢালু, জলাবদ্ধ, স্যাঁতসেতে এমনকি লোনা মাটিতেও যেখানে অন্যকোন ফসল হয় না সেখানে পারা ভাল জন্মে। জমি চাষ পদ্ধতি নেপিয়ার ঘাসের মতই।
চিত্র ১৬.৩ঃ পারা ঘাস
রোপণ প্রণালী ও সময়ঃবর্ষার সময় সারি করে লাগাতে হয়। দুই সারির মধ্যবর্তী দূরত্ব ১.৫ ফুট। তবে এই ঘাসের সারি থেকে সারিতে কাটিংয়ের দূরত্ব তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই ঘাসের কাটিং বা মুথা লাগানো যায়।
সার প্রয়োগ ও পানি সেচঃঘাস লাগানোর ২-৩ সপ্তাহ পর একর প্রতি ৩৫কেজি ইউরিয়া দিতে হয়। পারা ঘাস পচা গোবর বা গো-শালা ধোয়া পচা পানিতে খুব ভাল হয়। রাসায়নিক সারের অভাবে ঘাস কাটার পর পচা গোবর জমিতে ছিটিয়ে দিলেও ভাল ফলন পাওয়া যায়। প্রতিবার ঘাস কাটার পর একর প্রতি ৩০-৩৫ কেজি ইউরিয়া দিলে ফলন বেশী হয়।
ঘাস কাটা ও ফলনঃলাগানোর ৪০-৫০ দিন পরই ঘাস কেটে খাওয়ানো যায়। পরে অবস্থা অনুযায়ী ৪-৭ সপ্তাহ পর পর ঘাস কাটা যাবে। একর প্রতি বছরে উৎপাদন ৪০,০০০-৪৫,০০০ কেজি। গোড়া থেকে ৪-৫র্র্র্ রেখে কাটতে হয়।
খাওয়ানোর নিয়ম ও সংরক্ষনঃএ ঘাস মাঠে গরু চড়িয়ে অথবা কেটে এনে খাওয়ানো যায়। তবে জমি থেকে কেটে এনে খাওয়ানোই ভাল। শুকিয়ে রাখা ভাল নয় তবে সাইলেজ করে রাখা যায়।
গিনি ঘাস চাষ পদ্ধতি
গিনি ঘাস দেখতে অনেকটা ধান গাছের মত। পারা ও নেপিয়ারের তুলনায় জলীয় ভাগ কম এবং খাদ্যমান
বেশী।
চাষ পদ্ধতিঃগিনি ঘাস উঁচু ও ঢালু জমিতে হয়। জলাবদ্ধ স্যাঁতসেতে এবং নীচু জমিতে ভাল হয় না। এ ঘাস
ছায়াযুক্ত স্থানেও হয়। জমিতে ৪/৫ টি চাষ দিয়ে নেপিয়ারের মত সারিবদ্ধভাবে লাগাতে হয়।
রোপণ প্রণালী ও সময়ঃবর্ষা মৌসুমে লাগাতে হয় তবে বেশী বৃষ্টি বা জলাবদ্ধ অবস্থায় চারার গোড়া পঁচে
মরে যেতে পারে। মাটিতে পর্যাপ্ত রস বা সেচের ব্যবস্থা থাকলে গ্রীষ্মে প্রথমে রোপণ করলে ভাল ফলন
পাওয়া যায়। গিনি ঘাসের বীজ বা কান্ড দু’ই লাগানো যায়। সারিবদ্ধ ভাবে লাগাতে হয়। দুই সারির মধ্যবর্তী
দূরত্ব ১.৫-২ ফুট ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ১-১.৫ ফুট। কান্ড লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন
কান্ডের খন্ডিত অংশে কমপক্ষে দুইটি গিড়া থাকে।
সার প্রয়োগ ও পানি সেচঃজমি তৈরীর সময় একর প্রতি ৪০০০ কেজি গোবর সার দিতে হবে। প্রতিবার
ঘাস কাটার পর একর প্রতি ৪০ কেজি ইউরিয়া দিলে ফলন বেশী হয়।
ঘাস কাটা ও ফলনঃনেপিয়ার ঘাসের মত কাটা যায়। ফলন একর প্রতি ৩০,০০০-৩৫,০০০ কেজি।
খাওয়ানোর নিয়ম ও সংরক্ষনঃ কেটে খাওয়ানোই ভাল। খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যায়। এই ঘাস
শুকিয়ে রাখা যায়।
জার্মান ঘাস চাষ পদ্ধতি
জার্মান এক প্রকারের স্থায়ী ঘাস। কান্ড বা মুথা লাগাতে হয়।
চাষ পদ্ধতিঃএই ঘাস খাল, বিল, নদীর ধার, বা জলাবদ্ধ জমিতে ভাল হয়। নেপিয়ার ঘাসের মতই জমি তৈরী
করে ঘাসের মুথা বা কাটিং লাগানো যায়।
চিত্র ১৬.৪ঃ জার্মান ঘাস
রোপণ প্রণালী ও সময়ঃ বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাস এ ঘাস রোপণ করার উপযুক্ত সময়। নেপিয়ার ঘাসের মতই সারিবদ্ধ করে লাগানো হয়।
সার প্রয়োগ ও পানি সেচঃএ ঘাসের জমি সব সময় ভেজা থাকতে হয়। জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ গোবর
সার দিতে পারলে ঘাস লাগানোর ২-৩ সপ্তাহ পর একর প্রতি ৩০-৩৫ কেজি ইউরিয়া দিতে হবে। তাছাড়া
প্রতিবার ঘাস কাটার পর একর প্রতি ৩০-৩৫ কেজি ইউরিয়া দিতে হয়।
ঘাস কাটা ও ফলনঃঘাস লাগানোর ৪৫-৬০ দিন পরই প্রথমবার কাটা যায়। পরবর্তীতে ৪/৫ সপ্তাহ পর পর কাটা যাবে। ফলন বছরে একর প্রতি ৪০,০০০-৪৫,০০০ কেজি ঘাস পাওয়া যেতে পারে।
খাওয়ানোর নিয়ম ও সংরক্ষনঃঘাস কেটে এনে খাওয়ানোই উত্তম। শুকিয়ে রাখা ভাল নয় তবে সাইলেজ করে রাখা যায়।
ভুট্টা ঘাস চাষ পদ্ধতি
ভুট্টার কচি সবুজ গাছ গবাদি পশুর অত্যন্ত পুষ্টিকর ও উপাদেয় খাদ্য। আমাদের দেশে এখন প্রচুর ভুট্টা চাষ হচ্ছে।
চাষ পদ্ধতিঃউঁচু/নীচু কিন্তু পানি জমে থাকে না এরকম জমিতে ভুট্টার চাষ করা যায়। বছরের সকল সময়ই ভুট্টার চাষ করা যেতে পারে। নীচু জমিতে বর্ষার পানি চলে যাওয়ার পর এবং উঁচু জমিতে সেচের ব্যবস্থা থাকলে একই সময়ে কার্তিক অগ্রাহণ মাসে ভুট্টার চাষ করা যায়। শীতের শেষে ফাল্গুন-চৈত্র মাসেও পানি সেচ দিয়ে বা বৃষ্টি হওয়ার পর ভুট্টার বীজ বোপন করা যায়। ভুট্টা অধিক শীত ও অধিক বৃষ্টি কোন অবস্থাতেই ভাল জন্মে না। বীজ বপনের আগে ৫/৬ বার জমি চাষ করে জমি তৈরী করতে হবে। একর প্রতি ১৫-২০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
চিত্র ১৬.৫ঃ ভুট্টা ঘাস
বপণ প্রণালীঃসারিবদ্ধ ভাবে বপন করা ভাল। দুই সারির মধ্যবর্তী দূরত্ব ১ ফুট ও ১র্র্ পর পর বীজ বপন করতে হয়। ক্ষেত সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ ও পানি সেচঃজমি তৈরীর সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে গোবর সার প্রয়োগ করা যায়, অতিরিক্ত একর প্রতি ৪০ কেজি ইউরিয়া, ২০ কেজি টি এস পি ও ১০ কেজি এম পি প্রয়োগ করলে ফলন ভাল পাওয়া যায়। জমিতে রস না থাকলে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
খাওয়ানোর নিয়ম ও সংরক্ষণঃগাছের উচ্চতা ২-২.৫ ফুট হলেই ঘাস হিসাবে কেটে খাওয়ানো যায়। কিন্তু বীজ করলে গাছের উচ্চতা ১.৫ ফুট হলেই এক সারি পর পরবর্তী সারির গাছ তুলে ফেলতে হবে যা গরুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। অবশিষ্ট সারি সমূহের গাছ ৬র্ পর পর রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে। এর ফলে বীজ করার জন্য রেখে দেওয়া গাছগুলো সঠিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। বীজের জন্য রাখা গাছগুলোর গোড়ায় ভালভাবে মাটি দিতে হবে। ভুট্টা গাছ সাইলেজ করে সংরক্ষণ করা যায়।
বিশেষ ধরনের পশুখাদ্য উৎপাদন প্রস্ত্ততকরণ ও সংরক্ষণ প্রযুক্তি
১৭.১ ইউরিয়া মেলাসেস স্ট্র (ইউ এম এস)
এটি ইউরিয়া, মোলাসেস এবং খড় (স্ট্র) এর একটি মিশ্রিত খাবার যা গরুকে প্রতিদিন শুকনা খড়ের পরিবর্তে চাহিদা মত খাওয়ানো যায়। খাদ্যটিতে খড়, চিটাগুড় বা মোলাসেস ও ইউরিয়া এর অনুপাত যথাক্রমে ৮২:১৫:৩।
ইউ, এম, এস, তৈরী
ইউ এম এস তৈরীর প্রথম শর্ত হল এর উপাদানগুলির অনুপাত সর্বদা সঠিক রাখতে হবে অর্থাৎ ১০০ ভাগ ইউ,এম,এস এর শুষ্ক পদার্থের মধ্যে ৮২ ভাগ খড়, ১৫ ভাগ মোলাসেস এবং ৩ ভাগ ইউরিয়া থাকতে হবে । এ হিসাব মতে ১০০ কেজি শুকনা খড়, ঘনত্বের উপর নির্ভর করে ২১-১৪ কেজি ইউরিয়া মিশালেই চলবে । খড় ভিজা বা মোলাসেস পাতলা হলে উভয়ের পরিমাণই বাড়িয়ে দিতে হবে ।
প্রথমে খড়, মোলাসেস ও ইউরিয়ার পরিমাণ মেপে নিতে হবে । বিভিন্ন পরিমাণ খড়ের সহিত ইউরিয়া ও মোলাসেস কি পরিমাণ মিশাতে হবে তার একটি সারণী (১৭.১) নিম্নে দেয়া হল ।
মোলাসেস ওইউরিয়া ওজনের পর প্রয়োজন মত পরিষ্কার পানিতে (সাধারণত ৪০-৬০কিলো )এমন ঘনত্বে মিশাতে হবে যাতে সম্পূর্ণ দ্রবণটুকু খড়ের সাথে সহজে মিশানো যায় । পানি বেশী হলে দ্রবণটুকু খড় চুষে নিতে পারবে না আবার কম হলে দ্রবণ ছিটানো সমস্যা হবে।
শুকনো খড়কে পলিথিন বিছানো বা পাকা মেঝেতে সমভাবে বিছিয়ে ইউরিয়া মোলাসেস দ্রবণটি আস্তে আস্তে ঝরণা বা হাত দিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে,এবং সাথে সাথে খড়কে উল্টিয়ে দিতে হবে যাতে খড় দ্রবণ চুষে নেয় । এ ভাবে স্তরে স্তরে খড় সাজাতে হবে এবং ইউরিয়া মোলাসেস দ্রবণ সমভাবে মিশিয়ে নিতে হবে । ওজন করা খড়ের সাথে পুরো দ্রবণ মিশিয়ে নিলেই ইউ.এম.এস পশুকে খাওয়ানোর উপযুক্ত হয় ।
চিত্র ১৭.১ঃ
অন্য ভাবে ও ইউ এম এস তৈরী করা যায় । এ পদ্ধতিতে যে কোন প্রকার পাত্রে ওজন করা মোলাসেস ও ইউরিয়াতে পরিমাণ মত পানি দিয়ে দ্রবণ তৈরী করে নিতে হবে । তারপর সারণী (১৭.১) তে উল্লেখিত হিসাব মোতাবেক ওজন করা খড় এমন ভাবে ভিজাতে হবে যাতে পুরো দ্রবণটি শুষে নেয় । উক্ত যে কোন উপায়ে তৈরী ইউরিয়া মোলাসেস খড় সঙ্গে সঙ্গে গরুকে খাওয়ানো যায় অথবা একবারে ২/৩ দিনের তৈরী খড় সংরক্ষণ করে আস্তে আস্তে খাওয়ানো যায়। তবে কোন অবস্থাইে খড় বানিয়ে তিন দিনের বেশী রাখা উচিৎ নয়। কারণ তাতে খড়ে ইউরিয়া এবং মোলাসেস এর পরিমাণ কমতে থাকবে।
সারণী ১৭.১ঃ ইউ.এম.এস তৈরীর জন্য বিভিন্ন উপাদানের আনুপাতিক হার ঃ
শুকনো খড় (কেজি) | পানি (লিটার) | মোলাসেস(কেজি) | ইউরিয়া (কেজি) |
৫ | ২.৫ - ৩.৫ | ১.০৫ - ১.২০ | ০.১৫ |
১০ | ৫.০ - ৭.০ | ২.১০ - ২.৪০ | ০.৩০ |
২০ | ১০.০ - ১৪.০ | ৪.২০ - ৪.৮০ | ০.৬০ |
৫০ | ২৫.০ - ৩৫.০ | ১০.৫০ - ১২.০০ | ১.৫০ |
১০০ | ৫০.০ - ৬০.০ | ২১.০০ - ২৪.০০ | ৩.০০ |
সুবিধা
*ইউ.এম.এস বাছুর , বাড়ন্ত, দুগ্ধবতী ও গর্ভবতী গরু অথবা মহিষকে তাদের চাহিদা মত খাওয়ানো যায়।
*শুধু ইউ.এম.এস খাওয়ালেও গরুর ওজন বৃদ্ধি পায়।
* ইউ.এম.এস তৈরীর পদ্ধতি সহজ। একজন শ্রমিক প্রায় ৫০০ - ৬০০ কেজি খড় তৈরী করতে পারেন।
* গবেষনা করে দেখা গাছে যে, এ পদ্ধতিতে খড়ের সঙ্গে ১.০০ টাকার মোলাসেস খাইয়ে প্রায় ৫.০০ থেকে ৭.০০ টাকার গরুর মাংস উৎপাদন সম্ভব।
*ইউরিয় মোলাসেস ব্লক চেটে খাওয়ালে প্রাণীর যে উপকার হয় তা ইউ.এম.দ্বারাই সম্ভব ।
* যেহেতু ইউরিয়া ও মোলাসেস খড়ের সাথে ধীরে ধীরে খাচ্ছে , বিধায় বিষক্রয়া হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
* সকল বয়সের গরু মহিষ যথেচ্ছা পরিমাণ এই খাদ্য খেতে পারে।
* গর্ভবতী পশুর এই খাদ্য খেতে পারে।
*কৃষক তার দৈনিক চাহিদা মত খড় প্রস্ত্তত করে প্রতিদিন খাওয়াতে পারেন।
অসুবিধা
* ইউ.এম.এস পদ্ধতিতে ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানোর তেমন কোন অসুবিধা নেই। শুধু মাত্র ইহা তৈরী করে তিন দিনের বেশী সংরক্ষণ করে রাখা যায় না।
সাবধনতা
অবশ্যই ইউ, এম, এস, তৈরী করার সময় ইউরিয়া, মোলাসেস, খড় ও পানির অনুপাত ঠিক রাখতে হবে । ইউরিয়ার মাত্রা কোন অবস্থাতেই বাড়ানো যাবে না । ইউ,এম,এস,এর গঠন পরিবর্তন করলে কাংখিত ফল পাওয়া যাবে না ।
সারণী ১৭.২ঃ ইউ, এম, এস খাওয়ানোর নিয়ম
প্রাণীর ধরন | ইউ, এম, এস | দনাদার মিশ্রণ |
গরু | গরুর ইচ্ছামত | ওজনের শতকরা ০.৮ - ১.০ ভাগ |
দুগ্ধবতী গাভী | গাভীর ইচ্ছামত | দুধ উৎপাদনের ভিত্তিতে |
বাছুর ( ৬ মাস) | বাছুরের ইচ্ছামত | ওজনের শতকরা ১.০ ভাগ |
১৭.৩ দানাদার মিশ্রণ
1. গম, চাল বা ভূট্টা ভাংগা = ১০- ২০ কেজি
2. গমের ভূষি ও ধানের কুড়ার মিশ্রণ (১ঃ১) = ৪৫- ৫৫ কেজি
3. সরিষা, তিল বা নারিকেলের খৈল = ২০- ২৫ কেজি
4. মাছের গুড়া = ৪-৫ কেজি
5. চুনাপাথর বা ঝিনুকের পাউডার = ৩-৪ কেজি
6. লবন = ০.৫- ১ কেজি
প্রযুক্তিটি সহজ, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ামুক্ত ও লাভজনক । ইউ,এম,এস গো- খাদ্য প্রযুক্তিটি গবাদি পশুর পুষ্টি সরবরাহ এবং একই সাথে গবাদিপশু হতে পরিবেশ দূষণ হ্রাস করে । দেশের দুধ ও মাংসের ঘাটতি পূরণ ও বর্ধিত জনসংখ্যার কর্মসংস্থান করতে বাণিজ্যিক ভাবে গরু মোটাতাজাকরন ও দুগ্ধ খামার প্রতিষ্ঠায় ইউ,এম,এস প্রযুক্তিটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে ।
১৭.২ ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক প্রস্ত্তকরণ
আমাদের দেশের গরু সাধারনতঃ খড় খেয়ে জীবন ধারন করে। তারপরও অনেক সময় খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা যায়। ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক একটি শক্তিশালী এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ জমাট খাদ্য। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় খনিজ ও ভিটামিন দেয়া থাকে। খড়ের সাথে পরিপাক খাদ্য হিসাবে ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক খাওয়ালে পশুর শরীরে মাংস/চর্বি বাড়ে। এক কেজির একটি ব্লকে সাধারনতঃ ৯ মেগা জুল শক্তি ও ২৪০ গ্রাম প্রোটিন থাকে।
ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরীর পদ্ধতি
সারণী ১৭.৪ঃ ব্লকের মধ্যে শতকরা নিম্নরূপ উপাদান থাকে।
উপাদান | পরিমান |
মোলাসেস/চিটাগুড় | ৫০ - ৬০ ভাগ |
গমের ভূষি | ২৫ - ২৬ ,, |
ইউরিয়া | ৮ - ৯ ,, |
পাথরী চুন ( খাওয়ার চুন) | ৫ - ৬ ,, |
১০ কেজি পরিমান ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরীর পদ্ধতি নিম্নে দেয়া হল।
১। ৫ - ৬ কেজি পরিমাণ মোলাসেস বা চিটাগুড় একটি ড্রামে/লোহার কড়াইয়ে নিয়ে চুলায় দিয়ে তাপ দিতে হবে। ২.৫ - ৩.০ কেজি পরিমাণ ভূষি কড়াইয়ে নিতে হবে এবং নাড়নী দিয়ে চিটাগুড়ের সঙ্গে মেশাতে হবে।
২। এবার ৩৫ গ্রাম লবন এবং যে কোন ডিবি ভিটামিন ১০০ গ্রাম মেপে নিয়ে কড়াইয়ে দিতে হবে।
৩। এবার ৮০০ - ৯০০ গ্রাম ইউরিয়া আলাদাভাবে মেপে নিতে হবে।
৪। ৫০০ - ৬০০ গ্রাম পাথরে চুন ওজন করে মোলাসেস তৈরী করার পূর্বে দিনে সামান্য পানিতে ভিজে রাখতে হবে।
৫। ওজনকৃত চুন, ইউরিয়া, লবন ও ভিটামিন ভালভাবে মিশে নিতে হবে এবং কড়াইয়ে ছেড়ে দিতে হবে।
৬। এবার কড়াই বা ড্রামটি আগুন/চুলা থেকে নামিয়ে ভালভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে যতক্ষন পর্যন্ত না চিটাগুড়ের আঠা আঠা ভাব আসে ।
৭। চিটাগুড়, ভূষি, চুন, ইউরিয়া, খনিজলবন ও ভিটামিন মিশ্রিত মিশ্রণ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ছাঁচের আকার ও ধারন ক্ষমতা যেমনঃ ১ কেজি ওজনের ব্লক তৈরী করা যেতে পারে।
৮। মিশ্রণটি নির্দিষ্ট ছাঁচে/ ফর্মায় ঢালার পর ছাঁচের মাপ অনুযায়ী ঢাকনা উপরে রেখে চাপ দিতে হবে যেন মিশ্রনটি শক্ত জমাট বেঁধে ছাঁচের আকারের মত একটি ব্লকে পরিনত করতে সাহায্য করে।
৯। সাবধনতার সাথে ছাঁচটি ব্লক থেকে তুলে নিতে হবে এবং ৩০ মিনিটের মত বাহিরে রেখে দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে ব্লকটি শক্ত হয়ে যাবে।
১০। যদি এক সঙ্গে অধিক পরিমাণ ব্লক তৈরী করা প্রয়োজন হয় তবে পলিথিনের মোড়কে আচ্ছাদিত করা উচিত। এতে ব্লকের গায়ে ধুলাবালি লাগবে না এবং অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।
ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক খাওয়ানোর নিয়ম
প্রতিদিন গরুকে ২৫০ - ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক শুষ্ক অবস্থায় খাওয়াতে হবে। ব্লকটি গরু প্রথম প্রথম খেতে না চেলে ব্লকের উপর লবন বা ভূষি ছিটিয়ে দিতে হবে এবং যত্নসহকারে খাওয়াতে হবে। ব্লক খাওয়ানোর পাশাপাশি গবাদী পশুকে অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার যেমনঃ খড়, তাজা ঘাস, দানাদার খাদ্য, পানি ইত্যাদি খাওয়াতে হবে।
১৭.৩ গো- খাদ্য হিসাবে এ্যালজির উৎপাদন ও ব্যবহার
এ্যালজি এক ধরনের উদ্ভিদ যা আকারে এককোষী থেকে বহুকোষী বিশাল বৃক্ষের মত হতে পারে। তবে আমরা এখানে দুটি বিশেষ প্রজাতির এককোষী এ্যালজি ক্লোরেলা ও সিনেডেসমাস নিয়ে আলোচনা করবো যা গো- খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। এরা সূর্যালোক, পানিতে দ্রবিভূত অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও জৈব নাইট্রোজেন আহরন করে সালোক সংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় বেঁচে থাকে। এরা অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল বিশেষ করে বাংলাদেশের মত উষ্ণ জলবায়ুতে।
চিত্র ১৭.২ঃ
এ্যালজির পুষ্টিমান
বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত খাদ্যের মধ্যে এ্যালজি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় পুষ্টিকর খাদ্য যা বিভিন্ন ধরনের আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন- খৈল, শুটকি মাছের গুঁড়া ইত্যাদির বিকল্প হিসাবে ব্যবহার হতে পারে। শুষ্ক এ্যালজিতে শতকরা ৫০ - ৭০ ভাগ আমিষ বা প্রোটিন থাকে, ২০ - ২২ ভাগ চর্বি এবং ৮ - ২৬ ভাগ শর্করা থাকে। এছাড়াও এ্যালজিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বি থাকে। কেবল মাত্র ’’সিসটিন’’ ছাড়া এ্যালজির প্রোটিনে বিভিন্ন ধরনের এ্যামাইনো এসিডের অনুপাত প্রায় ডিমের প্রোটিনের সমান। রোমন্থনকারী প্রাণীতে ( যেমন গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া) এ্যালজির প্রোটিনের পাচ্যতা ৭৩%।
এ্যালজির উৎপাদন পদ্ধতি
নিম্নে এ্যালজির উৎপাদন পদ্ধতি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।
এ্যালজি চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণঃ এ্যালজির বীজ, কৃত্রিম অগভীর পুকুর, টিউবয়েলের পরিস্কার পানি, মাসকালই বা অন্যান্য ডালের ভূষি এবং ইউরিয়া।
· প্রথমে সমতল, ছায়াযুক্ত জায়গায় একটি কৃত্রিম পুকুর তৈরী করতে হবে। পুকুরটি লম্বায় ১০ ফুট, চওড়ায় ৪ ফুট এবং গভীরতায় ১/২ ফুট হতে পারে। পুকুরের পাড় ইট বা মাটির তৈরী হতে পারে। এবার ১১ ফুট লম্বা, ৫ ফুট চওড়া একটি স্বচ্ছ পলিথিন বিছিয়ে কৃত্রিম পুকুরের তলা ও পাড় ঢেকে দিতে হবে। তবে পুকুরের আয়তন প্রয়োজন অনুসারে ছোট বা বড় হতে পারে। তাছাড়া মাটির বা সিমেন্টের চাড়িতেও এ্যালজি চাষ করা যায়।
· ১০০ গ্রাম মাসকলই ( বা অন্য ডালের) ভূষিকে ১ লিটার পানিতে সারারাত ভিজিয়ে কাপড় দিয়ে ছেঁকে পানিটুকু সংগ্রহ করতে হবে। একই ভূষিকে অন্তত তিনবার ব্যবহার করা যায়, যা পরবর্তীতে গরুকে খাওয়ানো যায়।
· এবার কৃত্রিম পুকুরে ২০০ লিটার পরিমাণ কলের পরিস্কার পানি, ১৫ - ২০ লিটার পরিমান এ্যালজির বীজ, যা এ্যালজির ঘনত্বের উপর নির্ভর করে এবং মাসকলাই ভূষি ভেজানো পানি নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ২- ৩ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া নিয়ে উক্ত পুকুরের পানিতে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
· এরপর প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও বিকেলে কমপক্ষে তিনবার এ্যালজির কালচারকে নেড়ে দিতে হবে। পানির পরিমাণ কমে গেলে নতুন করে পরিমাণ মত পরিস্কার পানি যোগ করতে হয়। প্রতি ৩/৪ দিন পর পর পুকুর প্রতি ১ - ২ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া ছিটালে ফলন ভালো হয়।
· এভাবে উৎপাদনের ১২ - ১৫ দিনের মধ্যে এ্যালজির পানি গরুকে খাওয়ানোর উপযুক্ত হয়। এ সময় এ্যালজির পানির রং গাঢ় সবুজ বর্ণের হয়। এ্যালজির পানিকে পুকুর থেকে সংগ্রহ করে সরাসরি গরুকে খাওয়ানো যায়।
· একটি পুকুরের এ্যালজির পানি খাওয়ানোর পর উক্ত পুকুরে আগের নিয়ম অনুযায়ী পরিমাণ মত পানি, সার, এবং মাসকলাই ভূষি ভেজানো পানি দিয়ে নতুন করে এ্যালজি কালচার শুরু করা যায়, এ সময় নতুন করে এ্যালজি বীজ দিতে হয় না।
· যখন এ্যালজি পুকুরে পানির রং স্বাভাবিক গাঢ় সবুজ রং থেকে বাদামী রং হয়ে যায় তখন বুঝতে হবে যে উক্ত কালচারটি কোন কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে নতুন করে কালচার শুরু করতে হবে। এ কারণে এ্যালজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিম্নে বর্ণিত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ।
সাবধনতা
১। এ্যালজির পুকুরটি সরাসরি সূর্যালোকের নিচে না করে ছায়াযুক্ত স্থানে করা উচিৎ। কারণ অতি আলোকে এ্যালজি কোষের মৃত্যু হয়। এ জন্য কালচারটি নষ্ট হয়ে যায়।
২। কখনোই মাসকলাই ভূষি ভেজানো পানি বর্ণিত পরিমানের চেয়ে বেশী দেয়া উচিৎ নয়, এতেও ’’নিউট্রেন্ট সুপার সেচুরেশন’’ এর কারণে এ্যালজি কোষ মারা যেতে পারে।
৩। এ্যালজি পুকুরের পানিকে নাড়া না দিলে কোষের উপর কোষ থিতিয়ে কালচারটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৪। যদি কখনো এ্যালজি পুকুরের পানি গাঢ় সবুজ রংয়ের পরিবর্তে হালকা নীল রং ধারন করে তখন তা ফেলে দিয়ে নতুন করে কালচার শুরু করতে হবে। কারণ নীলবর্নের এ্যালজি ভিন্ন প্রজাতির বিষাক্ত এ্যালজি যা ক্লোরেলা ও সিনেডেসমাস থেকে ভিন্ন।
গরুকে এ্যালজি খাওয়ানো
এ্যালজির পানি সব ধরনের এবং সব বয়সের গরুকে অর্থাৎ বাছুর, বাড়ন্ত গরু, দুধের বা গর্ভবতী গাভী, হালের বলদ সবাইকেই খাওয়ানো যায়। এ্যালজি খাওয়ানোর কোন ধরা বাঁধা নিয়ম নেই। এটাকে সাধারণ পানির পরিবর্তে সরাসরি খাওয়ানো যায়। এক্ষেত্রে গরুকে আলাদা করে পানি খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। দানাদার খাদ্য অথবা খড়ের সাথে মিশিয়েও খাওয়ানো যায়। সাধারণতঃ দুই এক দিনের মধ্যেই গরু এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। গরু সাধারণতঃ তার ওজনের ৮ ভাগ অর্থাৎ ১৫০ কেজি ওজনের গরু ১২ কেজি পরিমান এ্যালজির পানি পান করে। তবে গরমের দিনে এর পরিমাণ বাড়তে পারে। এ্যালজির পানিকে গরম করে খাওয়ানো উচিৎ নয়, এতে এ্যালজির খাদ্যমান নষ্ট হতে পারে। যদি বেশী গরু থাকে, ( যেমন ধরুন ৫টি গরু আছে)। এক্ষেত্রে অন্ততঃ পূর্বে বর্ণিত আকারের ৫টি কৃত্রিম পুকুরে এ্যালজি চাষ করা উচ
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস